শাহিন চাষীর একগুচ্ছ কবিতা
নিবেদন
বৃক্ষ দেখে পড়ে নাও ফুল,
নদী ধরে জেনে নাও ছায়ার উষ্ণতা,
মাটি মাখো আর বুঝে নাও আকাশের বাণী…
এবার নিভূতে
একদম দ্বিধাহীন হও,
অতঃপর স্বপ্নবাজ কৃষকের একান্ত খেয়ালে
জীবনকে বুনে দাও জীবনের মাঠে।
কোথায় অন্ধকার?
কোথায় এলোকেশী মেঘদল?
চারিদিকে কেবল আলোর সুবাস…
নরম আলোর প্রশান্ত কোলাহল।
মিনতি
প্রদীপ হও,
কেবল একটা প্রদীপ- মঙ্গল দীপ,
পৃথিবী হাসুক- জীবন জাগুক, মানুষ বাঁচুক।
এই চোখ
বন্ধ হবে আজ কিংবা কাল,
এই হাত প্রবৃত্ত হবে না কোজাগরী চাঁদ ছুঁতে,
পা দুটো ভুলে যাবে দৌড়ের ব্যাকরণ,
দেহ আর নাম খুব গোপনেই মিশে যাবে
তরু অথবা তৃণে,
খণিজে বা আকরিকে
হয় ধুলোয়, নয় জলে…
একটা প্রদীপ জ্বালো,
একবার তাকাও ঐ সুদুরের দিগন্তরেখায়,
শিশিরের শব্দে
সন্ধ্যা আসে,
অন্ধকারে ভাসে!
যদি যেতে বলো
যদি যেতে বলো- চলে যাবো,
শুধু নিশ্চয়তা দাও
কখনো ভিজবে না চোখ
ভোরের কূজনে, ঝিমধরা সন্ধ্যায়..
কাঠফাটা রোদে, গোধুলি মায়ায়..
বর্ষার ঘ্রাণে, অপরূপ জ্যোৎস্নায়…
যদি যেতে বলো- চলে যাবো,
শুধু মুছে দাও
অনাগত অস্থিরতার অত্যাচার,
বুকে আঁকা স্বপ্নের ছবি,
আগুনমাখা মূর্তিমান অন্ধকার,
হৃদয়ে লেখা নাম…
যদি যেতে বলো- চলে যাবো,
শুধু ফিরিয়ে নাও
পুষ্পবতী চুমুর নরম স্বাদ,
সুকোমল হাসির পরম উষ্ণতা,
শুদ্ধতম স্পর্শের ছোঁয়া…
যদি যেতে বলো- চলে যাবো,
শুধু ফিরিয়ে দাও
সেইসব প্রতীক্ষার ক্ষণ,
সেইসব উদগ্রীব রাত জাগা,
সেইসব বেহিসেবী উন্মাদনা…
যদি যেতে বলো-চলে যবো,
শুধু উচ্চারণ করো
কখনো আর উদাস হবে না মন,
কখনো পড়বে না নীরব দীর্ঘশ্বাস,
কখনো বুক করবে না কেমন যেন…।
যদি যেতে বলো- চলে যাবো,
শুধু একবার চাও
আমার প্রশান্ত মুখের উপর,
আমি শুধু পড়বো তোমার গহীনের স্বর।
পরিচিত ঘামের ঘ্রাণ
নাট্যকারের ভাষার ভঙ্গিমায়–
বিবিধ উপমায় আমি তাকে বললাম,
মান্দারতলার মাঠের কাঠবিড়ালীর গল্পকথা।
সে হঠাৎ
একাগ্র আবৃত্তিকার
আর আকাশে, বাতাসে, দেওয়ালে…
সবাক ও শৈল্পিক আংশিক রঙিন চলচ্চিত্রের মতো
মসুরি-সবুজ সামারভিটে,
ডাহুক ডাকা সেনেরকুড়ি,
শাপলা ফোটানো কয়ারবিল,
মাছ-কিলবিল সোনারখাল,
শ্মশান-ছোঁয়া সাড়াতলা,
স্বচ্ছ জলের নৈসর্গিক বুকভরা..
সহসা আমার চোখ
সেই কারুময় সরল মুখে পলকহীন;
তার চুল আর শরীর থেকে প্রশান্ত পায়ে ছুটে এলো
হালসার ছায়া,
স্বজনের কথার ধ্বনি,
পরিচিত ঘামের ঘ্রাণ…
আরো পড়ুন: জাহীদ ইকবালের গল্প- ইস্টিশনের রুপা