চোখের আয়নায় দেখা কয়েক নক্ষত্র বছর: শায়লা সিমি নূরের সুফি গল্প
উৎসর্গ: হজরত তাসলিমা বেগম (রাঃ )
কৃতজ্ঞতা: (মা ) লুৎফুন্নেসা ফরিদা
১.
বদ্ধ বাড়ির নিজের তলা, গুমোট অন্ধকার…. স্যাঁতস্যাঁতে… একটি সবুজ আলোর রশ্মি, তার আভায় কিছু মুখ অন্ধকারে ঠাঁয়… কোথায়? নিজের মনে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর নেই। উত্তর পাবার জন্য যে জোর দেওয়া উচিত মননে, সে ক্ষমতা ও ইচ্ছে হারিয়ে আছে আঁধারের আলিঙ্গনে। মস্তিষ্ক আগের মুহূর্তের কোনো রেকোর্ডই রিকল করতে পারছে না! মনে আছে একটি শব্দ “আল্লাহ”….যেন আল্লাহ্পাক রিফ্রেশ করে আমাকে রিলোড করেছেন। আমার দিকে আবছায়া মুখগুলো তাকিয়ে আছে, কয়েক টুকরো আয়নায় আমি নিজের মুখ দেখছি যেন ! একটি আকাশ রঙের কাপড়ে একজনকে আমি দেখতে পাচ্ছি। সাদা না কি আকাশের রং? তবে আলো হয়ে আছে, আমি তাই দেখতে পাচ্ছি। অন্ধকারে গন্ধ আর রং খুব গুমোট আর অবসাদের… সেখানে কোনো আসার আশা-যাওয়া নেই! আলোর শক্তি প্রখর সামান্য আলো ঘন আঁধার কেটে ফালি করে দেয়। সামান্য আলোর ছটায় এতো আভিজাত্য? ঘন অন্ধকারের সকল অস্তিত্ব বিলীন হয়…
ভাবছি … আজীবন এমনি ছিলাম কি? কোনো কার্য-কারণ ছিলো না আমার? এ’ কারণেই স্মরণ বলে কিছু আমার নেই? মাত্র অ্যাক্টিভেটেড করা হয়েছে আমাকে? মৃত্যু পার হয়ে এখানে অন্য একটি জীবনের খোঁজে? নাকি এখানেই সবে শুরু হলো? আবিষ্কার করলাম মানুষের মুখ, মৃত্যু ও জন্ম এ কয়েকটা তথ্য আমার মস্তিষ্কে সংবোধ করেছে, হয়তো আরো তথ্য আমায় দেওয়া হবে, বুঝলাম বর্তমান’ই সময়ের সংজ্ঞা।
হাতে একটি কাঠের অবস্থান বোধ করি… ধাক্কা দিতে শুরু করলাম যেন, কোনো গার্মেন্টসের ভিতর ভুমি-ধ্বসে আটকা পড়ার গল্প নিয়ে বানানো কোনো চলচিত্রের একটি চরিত্রে আমি ঢুকে পড়েছি…. ভেঙে দেখি , অনেক আলো উপরে খেলা করছে উড়ছে যেন সব অ-মধ্যকর্ষণে … আমাদের ডাকছে! একটি সুড়ঙ্গ পথ … আমি পিছনে তাকিয়েছি কিন্তু, দেখার চেষ্টা করিনি কিছু। কিছু তথ্য এ মুহূর্তে প্রয়োজন নেই যেমন-এখানে কি হচ্ছে … কারা ওরা… ইত্যাদি! আগে আমাকে আগাতে হবে…
একটি সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে যেতে একটি পেইন্টিং আমাকে আঁকড়ে ফেলেছে কয়েক সেকেন্ড… বা এখানে সময়ের ধারণা কি অজানা রয়েছে আমার কাছে! পেইন্টিং’টার মধ্যে লেখা মা শব্দটি, নিচে কিছু অনু-পরমাণুর অস্তিত্ব বা মহাকাশে কিছু গ্রহের জন্মক্ষণে নূরের ছুটোছুটির আশ্চর্য এক দৃশ্য! এ দেখতে যে সময় লেগেছে তারমধ্যে আমার পিছনের অনেকেই আমাকে পার হয়ে এগিয়ে গেলো। আকাশি কাপড়ে যিনি ছিলেন তিনি আসলে গর্ভবতী এতক্ষনে জানতে পারলাম… এখন মেমোরিও পেয়েছি, তাকে দেখেছিলাম মনে করতে পেরেছি! এরই মধ্যে পেইন্টিংটা কিছু কথা বলে ফেললো আমি কিছু বুঝতে পারছি। সম্ভবত সন্তানের আসার সময় এটাই!
মহিলা আর বাচ্চাকে গর্ভে রাখতে পারবেন না… উনি শুয়ে পড়লেন, আমি ও তার সঙ্গী লোকটি ধরে উপরে নিয়ে গেলাম। যেখান অনেক আলো, মানুষ আর অনেক রঙের কাপড়! যেন আকাশ আলোকিত করে সূর্যোদ্বয় হলো, সে সঙ্গে একটি রংধনু উপহার পেলাম!
২.
চিৎকার শুনতে পাচ্ছি
নিজের ভিতর।
অন্তঃস্থল থেকে
সকল বর্জন /অর্জন
স্রোতে ভেসে আসছে …
হৃদয়ের রাস্তা ধরে কণ্ঠস্বরে
সমস্ত পৃথিবী
আর্তনাদ করতে পারেনি
কয়েক নক্ষত্র বছর…
সে সব মিলে একাকার!
আমি ভূমির গভীরে
যেখানে সৃষ্টির শেষ বা শুরু
সেখান থেকে মহাকাশ পর্যন্ত
চিৎকার করছি…
এক সৃষ্টির বেদনা
ও আনন্দে মিশে!
“রুমি আপনি নাচুন,
আরো দ্রুত…
আমাকে আঁকড়ে রাখুন!”
অজান্তেই বলছি… বাচ্চাটি একজনের হাতে, যে মাত্র জীবন গ্রহণ করেছে!
৩.
যেন এক গভীর জলাশয়ে আমি বহুকাল ধরে আল্লাহর সাধনায় ছিলাম। আমি চোখ খুলতে চাই না… আমার প্রভু কেন নিজের থেকে আলাদা করলেন আমার সত্তাকে? সমুদ্রের অতল ঠেলে এক নীল তিমির কান্নার শব্দে আমার কল্ব অস্থির হয়ে যায়… কেন এতো সাদা?
কেন সব জ্বলসে যাচ্ছে?
আষ্টে-পিষ্টে বেঁধে ফেলেছে কিসে?
ভীষণ কষ্টে আমি নীল হয়ে যাই …
মালিক আমাকে কোথায় এনেছেন?
কবে আমি সেখানে যাবো ফিরে?
এক ভয়ঙ্কর বিচ্ছেদের বুক ভাঙা কষ্টে আমার ছোট নিঃশ্বাস কে আবিষ্কার করলাম… মমতার স্পর্শে, একটি চোখের আয়নায়!
একটি কথা ভেসে আসছে – ” আমি আল্লাহ থেকে আর মুমিনগণ আমার থেকে “…
শায়লা সিমি নূর: সুফী শিল্পী ও কবি। তার কবিতার বই ‘IN THE NAME OF’ গতবছর সার্ক সাউথ এশিয়ান পোয়েট্রি রেকগনিশন করেছে এ-বছর বোডলিয়ান লাইব্রেরি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এ সংগ্রহ করা হবে।
স্বত্বাধিকারী: বেগম রেস্টুরেন্ট এন্ড গ্যালারি, বেগম প্রকাশনা, বেগম এনিম্যাল কেয়ার, রাজুস রিড লাইব্রেরি।